• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

মাদারীপুর দর্পন

মনোনয়ন প্রতারকচক্রের ৩ সদস্য গ্রেফতার, ৫০ লাখ টাকা খোয়ালেন নেতা

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০২৩  

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘নিশ্চিত মনোনয়ন’ পেতে প্রতারণার শিকার হয়েছেন ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায় (৬৩)। চক্রের খপ্পরে পড়ে ৫০ লাখ টাকা খুইয়েছেন তিনি। অভিযোগ পেয়ে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ।

শনিবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।

তিনি জানান, মনোনয়নপ্রত্যাশী ওই আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোন করে ওই প্রতারক চক্রের এক সদস্য। সে ফোনে বলে— আমি এনএসআইয়ের ডিডি (ডেপুটি ডিরেক্টর) হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আছি। জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংক্রান্ত ইস্যুতে কাজ করছি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমি কয়েকজনকে বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন পাইয়ে দিয়েছি। আসন্ন ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ইতিমধ্যে কয়েকজনের মনোনয়নের বিষয়টি আমি নিশ্চিত করছি।

মোবাইল ফোনে এমন পরিচয়ে কথা পরে আস্থা অর্জনের পর ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতাকে ওই প্রতারক আরও বলে, ‘আপনার মনোনয়নের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। এজন্য ৫০ লাখ টাকা নগদ দিতে হবে।’ এরপর দলের শীর্ষস্থানীয় এক নেতার কন্যা পরিচয়ে এক নারী কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয় চক্রের সদস্যরা।

এভাবে মনোনয়ন পেতে প্রতারণার ফাঁদে পড়েন দীপক কুমার রায় (৬৩)। পরে গত ২৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগের মনোনয়নের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হলে সেখানে নাম ছিল না ওই ভুক্তভোগীর। এতে বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরপর ভুক্তভোগী দীপক কুমার রায় বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- নুরুল হাকিম (৩১), হাসানুল ইসলাম জিসান (২২) ও মো. হারুন অর রশিদ (২৯)।

সংবাদ সম্মেলনে হারুন অর রশিদ বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের টার্গেট করে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দেশব্যাপী সক্রিয় হয়। এর ধারাবাহিকতায় চক্রটি দেশের বিভিন্ন স্থানে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের টার্গেট করে। ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের অভিযানে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়।

হারুন অর রশীদ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আসামিরা আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে।

তিনি জানান, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর গ্রেফতার আসামি নুরুল হাকিম (৩১) নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর এক সচিব ও অপর আসামি হাসানুল ইসলাম জিসান (২২) নিজেকে অপর এক সচিবের পরিচয় ব্যবহার করে দিয়ে তিনটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মনোনয়ন পাইয়ে দিবে বলে ফোন করে। এজন্য তাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা দিতেও বলা হয়।

এছাড়া প্রতারক চক্রের সদস্যরা নিজেকে ঢাকা জেলার সমাজসেবা অধিদফতরে উপ-পরিচালক শেখ কামাল হোসেন এবং সাভার উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মোহাম্মদ শিবলী জামান পরিচয়ে বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে বিভিন্ন সরকারি ভাতা কার্ড প্রদান করা হবে বলেও তালিকা করার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতো। প্রতারক চক্রের সদস্য নুরুল হাকিমের বিরুদ্ধে তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশিদ বলেন, এবিষয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে ভুক্তভোগী নিজেই অনুতপ্ত। তিনি (ভুক্তভোগী) প্রতারণার শিকার হওয়ার পর প্রথমে বিষয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানান। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি আমাদের দেখার জন্য বললে, আমরা দুই দিনের মধ্যে প্রতারকদের গ্রেফতার করি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশিদ বলেন, মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকেই প্রতারকদের ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তবে যারা আমাদের কাছে অভিযোগের মাধ্যমে জানিয়েছেন, আমরা গুরুত্বের সঙ্গে প্রতারকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছি।

তিনি বলেন, এমন প্রতারণার শিকার আরও কেউ থাকলে আমাদের জানাবেন। অবশ্যই আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।