• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন
ব্রেকিং:

মধ্যপ্রাচ্যফেরত রিপন হয়ে ওঠেন গার্মেন্টসপণ্য চোরচক্রের মূলহোতা

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩  

২০১৭ সালে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ থেকে ফিরে রেন্ট-এ কারের গাড়ি চালানো শুরু করেন মো. রিপন ওরফে ছোট রিপন। এসময় গার্মেন্টস পণ্য চোরচক্রের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরে তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর নিজেই গড়ে তোলেন ৫ থেকে ৭ জনের একটি সক্রিয় আন্তঃজেলা চোরচক্র।

গত ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানাধীন এলাকা থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের গার্মেন্টস পণ্যসহ এই আন্তঃজেলা চোরচক্রের মূলহোতা রিপনসহ ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৪। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করা হয়েছে।

গ্রেফতাররা হলেন- মো. রিপন ওরফে ছোট রিপন (৪৩), মো. বিল্লাল হোসেন ওরফে ছোট বিল্লাল (৩৬), নাঈম ইসলাম (২৭), মো. আকাশ (২৬), মো. সুমন (৩০), মো. ফরিদ (৩৮), মো. মঞ্জুর হোসেন জিকু (৩৮)। শনিবার (২৮ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১০ এ তথ্য জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি র‌্যাব-৪ এর একটি দল গার্মেন্টস পণ্য চুরি করার সময় নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন লাঙ্গলবন্দস্থ ভাইভাই টিম্বার স’মিলের গোডাউনে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২৬ হাজার ৯৯৫ পিস চোরাই গার্মেন্টস পণ্যসহ একটি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করা হয়। এসব গার্মেন্টস পণ্যের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। এসময় ওই ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

৭টি অভিযানের প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের বরাতে র‌্যাব জানায়, প্রথমে এক বা একাধিক মাস্টারমাইন্ড থাকেন যারা গার্মেন্টস পণ্য পরিবহনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাভার্ড ভ্যানের ড্রাইভার ও হেলপারদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। পরে তাদের বিভিন্ন প্রলোভনে প্রলুব্ধ করেন। অল্পসময়ে অধিক অর্থ প্রাপ্তির আশায় ড্রাইভার ও হেলপাররা চোর চক্রের প্রস্তাবে রাজি হয়ে এই কাজে সহায়তা করেন। কাভার্ড ভ্যানে পণ্য লোড করার সময় বন্দরে প্রদর্শনের জন্য গার্মেন্টেসের পক্ষ থেকে পণ্যের স্যাম্পল ড্রাইভারের কাছে দেওয়া হয়ে থাকে। এ স্যাম্পল পাওয়ার পরপরই ড্রাইভার সুযোগ বুঝে ছবি তুলে মূলহোতার কাছে পাঠান। পণ্যের বাজারমূল্যের বিবেচনায় অধিক লাভজনক হলে মূলহোতা উক্ত ড্রাইভার ও হেলপারের সঙ্গে পরে চুক্তি করেন।

রিপন আগে থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী নির্জন জায়গায় অসাধু গোডাউন মালিকদের সঙ্গে আঁতাত করেন। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তাদের গোডাউন ব্যবহার করে সেখানে ড্রাইভার ও হেলপারের মাধ্যমে পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যানটি নিয়ে যান। গোডাউনে পণ্য চুরির জন্য কাভার্ড ভ্যান প্রবেশের আগেন কার্টন প্যাকেজিং ও লোড-আনলোড কাজে সিদ্ধহস্ত কয়েকজন সহযোগী সেখানে অবস্থান করে। তারা দেড়-দুই ঘণ্টার মধ্যে মালামালের ৩০ থেকে ৪০ ভাগ রেখে প্রত্যেক কার্টনে সমপরিমাণ ঝুট কাপড় রেখে আবার আগের মতো ঠিকঠাক করে কার্টনগুলো কাভার্ড ভ্যানে লোড করে দেন। এরপর কাভার্ড ভ্যানটি বন্দরের পথে রাওনা হলে চোর চক্রের নিজস্ব মিনি কাভার্ড ভ্যানে করে তাদের সুবিধামতো জায়গায় নিয়ে যায় পণ্যগুলো।

র‌্যাব আরও জানায়, ২৬ জানুয়ারি ফ্যাক্টরি থেকে পণ্যবাহী একটি কাভার্ড ভ্যান তেজগাঁওয়ে একটি পাম্পে গিয়ে জ্বালানি নিয়ে গাইডের জন্য কিছুক্ষণ অবস্থান করে। গাইড নাঈম উক্ত স্থানে এসে মূলহোতা রিপনের নির্দেশ অনুযায়ী কাভার্ড ভ্যান নিয়ে লাঙ্গলবন্দস্থ ভাইভাই টিম্বার স’মিলের গোডাউনের উদ্দেশ্যে রওনা করে। সেখানে পৌঁছানোর পর আগে থেকেই অপেক্ষারত বিল্লাল হোসেন ওরফে ছোট বিল্লাল, মো. ফরিদ এবং মঞ্জুরসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন বিশেষ কৌশলে কাভার্ড ভ্যানের সিলগালা তালা না খুলে বিশেষ কায়দায় কার্টনগুলো গোডাউনে নামান। ২৭ জানুয়ারি ভোরে কার্টন থেকে মালামাল চুরির সময় র‌্যাব-৪ এর আভিযানিক দল কাভার্ড ভ্যানের ড্রাইভার, হেল্পার, স’মিলের মালিক, লেবার সর্দারসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে।

জানা গেছে, বিল্লাল মূলহোতা রিপনের প্রধান সহযোগী। মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে ঢাকা জজ কোর্ট এলাকায় রিপনের সঙ্গে বিল্লালের পরিচয় হয়। বিল্লালের গ্রামের বাড়ি মুন্সিঞ্জের গজারিয়া এলাকায় এবং এসব চুরির ঘটনা যেহেতু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঘটে থাকে, তাই মূলহোতা রিপন বিল্লালকে গোডাউন ভাড়া করার কাজের প্রস্তাব দেন। তখন থেকেই বিল্লাল গোডাউন ভাড়া করার বিষয়টি দেখে আসছেন।

আরও পড়ুন>> রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়েছে সাইকেল চুরি

বিজ্ঞাপন

রিপন গার্মেন্টস পণ্য চুরির জন্য যখন কোনো একটি কাভার্ড ভ্যান টার্গেট করে নাঈমকে অবগত করলে তিনি উক্ত কাভার্ড ভ্যান ঢাকা থেকে পূর্ব নির্ধারিত গোডাউনে পৌঁছানো এবং পণ্য চুরির সময় গোডাউনের আশপাশে নজরদারিসহ সার্বিক দায়িত্বে থাকতেন। গ্রেফতার ফরিদ প্যাকেজিংয়ের কাজে অত্যন্ত দক্ষ হওয়ায় তিনি কার্টন থেকে মালামাল বের করে পুনরায় প্যাকেজিং করতেন। গ্রেফতার মঞ্জুর গোডাউনের মালিক এবং ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি, তার কাছে থাকা গ্যানিং মেশিন দিয়ে কাভার্ড ভ্যানের নাট-বল্টু কাটতেন। অপর আসামি ড্রাইভার আকাশ ও হেলপার সুমন মূলহোতা রিপনের প্রস্তাবে রাজি হয়ে তার কথামতো নির্ধারিত গোডাউনে গাড়ি পার্ক করাতেন। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় গার্মেন্টস পণ্য চুরির একাধিক মামলা রয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলেও জানায় র‌্যাব।