• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িতরা আজ মানবাধিকারের কথা বলে: প্রধানমন্ত্রী

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৭ আগস্ট ২০২২  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের নারী-শিশুদের হত্যায় জড়িত, আজকে তারাই মানবাধিকারের কথা বলে। সরকারের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। আমার প্রশ্ন, আমাদের মানাবধিকার কোথায়? ১৫ আগস্ট আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি, সেই সময়ে মানবাধিকার কোথায় ছিলো? যারা খুনিদের লালন পালন করলো, যারা খুনি-মানবাধিকার লঙ্ঘন করলো, তাদের মানবাধিকার নিয়ে তারা ব্যস্ত।

মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটের কারণে দীর্ঘ প্রায় তিন বছর পর সশরীরে উপস্থিত থেকে দলীয় কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেন শেখ হাসিনা। দলীয় প্রধানের উপস্থিতির কারণে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা দেখা যায়। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরেও হাজার হাজার নেতাকর্মী হাত নেড়ে ও গগণবিদারী স্লোগান দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে দেখা যায়।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রবাসে নিজের ছয় বছরের নির্বাসন ও ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পরও দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেষ হাসিনা বলেন, ‘বিচারের বাণী নীরবে কাঁদে। দেশে ফিরে এসেও বিচার চাইতে পারিনি। ’৯৬-তে ক্ষমতায় যাওয়ার আগে আদালতে গিয়েছি, বক্তব্য দিয়ে বিচার চেয়েছি। আমাদের মামলা করারও অধিকার ছিলো না। কারণ সেখানে ইনডেমনিটি দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়েছে। খুনিদের রাজনৈতিক দল গঠন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সারাবিশ্বে এই হত্যার বিচারের জন্য জনমত চালিয়েছি। আামদের নিয়ে মিথ্যাচার অপপ্রচার করা হয়েছে। ৯৬ সালে ক্ষমতায় না এলে তো ইনডেমনিটি বাতিল করতে পারতাম না। বিচারের উদ্যোগও নিতে পারতাম না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসলে কখনো এই হত্যার বিচার হতো না।’

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত- এমন অভিযোগ পুনরায় করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, ‘জিয়াউর রহমান জড়িত না থাকলে খুনিদের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে সহযোগিতা এবং বিভিন্ন দূতাবাসে পুনর্বাসন করতেন না। তিনি খুনি ও ষড়যন্ত্রকারী না হলে খুনি মোস্তাক তাকে সেনাপ্রধানই করবেন কেন? আর কেন খুনিদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেবেন?

বাংলাদেশের র‌্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আজ স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেয়, সেই দেশই তো খুনিদের আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। তাদের কাছ থেকে আমাদের মানবাধিকারের ছবক শুনতে হয়। এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সংকটের মুখে দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করতে হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজকে একদিকে তেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে, প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এটা একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। আজকে উন্নত দেশেও একই অবস্থা। ইউরোপের কোনো কোনো দেশে আরও খারাপ পরিস্থিতি। এই পরিস্থিতিতে আমরা বাধ্য হয়েছি তেলের দাম বাড়াতে।’

তিনি বলেন, ‘আমি জানি এটা বাড়াতে মানুষের কষ্ট হচ্ছে। সেটা আমরা বুঝি। সেজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ৫০ লাখ পরিবারকে মাত্র ১৫ টাকায় চাল আমরা সরবরাহ করবো। আর এক কোটি পরিবারকে ফ্যামিল কার্ড দেবো। যার মাধ্যম সাশ্রয়ী মূল্যে চাল-ডাল চিনি যার যেটা প্রয়োজন, সেটা তারা কিনতে পারবে।’

দেশের মানুষের মধ্যে যারা কষ্টে আছেন, তাদের পাশে দাঁড়াতে সমাজের বিত্তশালী এবং দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এখন বিশ্বব্যাপী মন্দাভাব ও অনেক জায়গায় দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের সবারই কিছু করণীয় আছে। বঙ্গবন্ধুর এই বাংলাদেশে দেশের কোনো মানুষ কষ্ট পাক- তা আমরা চাই না। তাই দেশের যারা বিত্তবান রয়েছেন, সবার প্রতি আহ্বান জানাই নিজ নিজ এলাকায় অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ান, সহযোগিতা করুন। সরকার থেকে সাধ্যমত চেষ্টা করা হচ্ছে। দলের নেতাকর্মীদেরও নির্দেশ দিয়েছি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে।’

দেশের মানুষের জন্য তার সরকার বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে ভুমিহীন-গৃহহীন মানুষকে ঘর উপহার দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই, দেশের একটি মানুষও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না। এই কারণে সরকার থেকে তাদের ঘর করে দেওয়া হচ্ছে। ঘর পাওয়া এসব মানুষের মুখের হাসি তৃপ্তি দেয়।’

জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বাবা আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করে এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। তাই সব যন্ত্রণা সহ্য করে নীলকণ্ঠী হয়ে অপেক্ষায় ছিলাম কখন ক্ষমতায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো। এই দেশকে সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারবো। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারলেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত প্রতিশোধ নিতে পারবো। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের কাজ অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। আজ বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর রক্ত বৃথা যেতে পারে না, যাবে না।’

আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আরও বক্তব্যে রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী এবং মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। সঞ্চালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।