• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে যা জানালো মন্ত্রণালয়

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১১ আগস্ট ২০২২  

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বুধবার (১০ আগস্ট) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৯তম বৈঠকে এই তথ্য জানানো হয়। এর আগে সংসদীয় কমিটি এবিষয়ে তথ্য জানানোর সুপারিশ করে। বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে জানানো হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সবসময় তৎপর। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সর্বদাই মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে যে, আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এবং আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে দেশে ফিরিয়ে আনলে বাংলাদেশের এবং একাত্তরে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া ৩০ লাখ শহীদের, সম্ভ্রমহানি হওয়া লাখো মা-বোনের প্রাণের দাবি মেটাতে সক্ষম হবে।

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সবসময় সব দেশকে তার প্রাপ্য সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডাও তার ব্যতিক্রম নয়। ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে দায়িত্বরত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে, সব ফোরামে, সব সভায় এই বিষয়টি যুক্তিসঙ্গত উপায়ে উপস্থাপন করে থাকেন। এটা যে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রাণের দাবি তা বোঝাতে সদা সচেষ্ট থাকেন।

‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সভায় এ প্রসঙ্গে আলোচনা করে থাকেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেকোনো সরকারি সফর হলে, তাতে রাজনৈতিক নেতাদের সম্পৃক্ত করে এবং তাদের মাধ্যমেও এই দাবির ব্যাপারে মার্কিন সরকারকে অবহিত করার উদ্যোগ চলমান রয়েছে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক সংলাপ, ৮ম বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারত্ব সংলাপ, ৮ম বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সংলাপে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিনকেনের চলতি বছরের ৪ এপ্রিলে দ্বিপাক্ষিক সংলাপে এ বিষয়টি উঠে আসে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওই বিষয়টির গুরুত্ব মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেলকে বোঝানোর জন্য সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিনকেনকেও অনুরোধ করেন।

এতে আরও বলা হয়, সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে যে সফর করেন, সেখানেও সংসদীয় প্রতিনিধিদল সিনেটর টেড ক্রুজ (রিপাবলিকান-টেক্সাস), কংগ্রেসম্যান স্টিভশ্যাবট (রিপাবলিকান-ওহাইও) এবং কংগ্রেসম্যান ডোয়াইটইভান্সের (ডেমোক্র্যাট-পেনসিলভানিয়া) সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট ডোনাল্ড লু’র সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। সব বৈঠকেই খুনি রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সংসদ সদস্যরা আলোচনা করেছেন।

বৈঠকে সিনেটর টেড ক্রুজ (রিপাবলিকান-টেক্সাস) এই মামলার বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য বিশদ তথ্যাদি সরবরাহ করার অনুরোধ করেন। এরইমধ্যে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এ তথ্য সরবরাহ করেছে। এশিয়া- প্রশান্ত মহাসাগরীয়, মধ্য-এশিয়া এবং নন-প্রলিফারেশন বিষয়ক ফরেন অ্যাফেয়ার্স সাব কমিটির র‌্যাঙ্কিং সদস্য কংগ্রেসম্যান স্টিভ শ্যাবট (রিপাবলিকান-ওহাইও) জানান যে তিনি বিচার বিভাগের হাউস কমিটিরও সদস্য এবং কমিটিতে তিনি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে দেশে পাঠানোর বিষয়টি উত্থাপন করবেন। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব টেস্ট অ্যাম্বাসেডর ডোনাল্ড লু বলেছিলেন, তিনি এ বিষয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে কথা বলবেন।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উদ্ভূত বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জসমূহ ও তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা হয়। প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী আমদানির ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশকেও বিকল্প হিসেবে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।

বৈঠকে সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন দেশের ভিসা প্রাপ্তিতে জটিলতা নিয়ে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তি সহজ করার সুপারিশ করা হয়।

কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, মো. হাবিবে মিল্লাত, নাহিম রাজ্জাক ও নিজাম উদ্দিন জলিল (জন) অংশ নেন।

বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিবসহ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।