• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

অবিলম্বে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক করার আহ্বান

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২১ মে ২০২২  

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ব নেতাদের অবিলম্বে করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ বৈশ্বিক রসদ এবং সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার (২০ মে) রাতে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি জাতিসংঘ আয়োজিত ‘গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ অন ফুড, এনার্জি অ্যান্ড ফাইন্যান্স (জিসিআরজি)’ এর প্রথম পর্যায়ের বৈঠকে তিনি এই আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অবিলম্বে বৈশ্বিক রসদ এবং সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক করা প্রয়োজন। এটি ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।

বৈশ্বিক বাণিজ্য এবং রপ্তানি আয় পুনরুজ্জীবিত করতে, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত এবং অন্যান্য দুর্বল দেশগুলোর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুল্কমুক্ত-কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার এবং আরও সহজলভ্য অর্থায়নে উন্নত অর্থনীতির দেশ এবং বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

শেখ হাসিনা বৈশ্বিক সংহতি জোরদার এবং একটি সু-সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, জি-৭, জি-২০, অর্গানাইজেশন ফর ইকোনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।

জিসিআরজি স্টেয়ারিং কমিটি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই গ্রুপের স্টিয়ারিং কমিটি সব বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত। এটা দেখে আমি খুশি। সংকট মোকাবেলায় কার্যকরী সুপারিশ তৈরিতে তাদের প্রচেষ্টায় আমরা আমাদের পূর্ণ সমর্থন দিবো।

কার্যকর খাদ্য সঞ্চয় ও বিতরণ ব্যবস্থার জন্য কৃষি খাতে প্রযুক্তি সহায়তা এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ এমন সময় আসলো যখন গোটা বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারীর ক্ষতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম করছে। করোনা মহামারীতের ভঙ্গুর বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর ইউক্রেন যুদ্ধ মারাত্বক চাপ সৃষ্টি করছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ কিভাবে দ্রব্যমূল্যে প্রভাব ফেলছে তা তুলে ধরে প্রধানমনন্ত্রী বলেন, খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে এবং নিশ্চিত করেছে জ্বালানি নিরাপত্তা। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিকে অত্যন্ত অস্থিতিশীল করে তুলেছে। সরবরাহ ঘাটতি এবং খাদ্য, জ্বালানি এবং অন্যান্য পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ইতিমধ্যেই সাধারণ মানুষের জীবনে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করেছে।

এই সংকট কাটাতে বিলাসী পণ্য আমদানি বন্ধ রাখা, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধ রাখা, কৃষি উৎপাদন বাড়ানো, এক কোটি পরিবারকে বিশেষ কার্ডের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করা, ১ কোটির বেশি মানুষকে খাদ্য ও নগদ সহায়তার মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক বাড়ানো, বৈধপথে আসা রেমিট্যান্সের সঙ্গে ২.৫ শতাংশ নগদ সহায়তাসহ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলিতে অনেক অব্যবহৃত ব্যবসার সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।

৪৮টি সদস্য রাষ্ট্রের সংগঠন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অনেক দ্বীপ রাষ্ট্র এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। সেসব দেশে কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থা গুরুতর চাপের মধ্যে রয়েছে।

সবার কল্যাণে জলবায়ু পরিবর্তন, জীব-বৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং পরিবেশগত অবক্ষয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অর্জিত জ্ঞান, বোঝাপড়া এবং অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্থ বিভিন্ন দেশে মারাত্মক চাপে থাকা এগ্রো-ফুড সিস্টেমের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

উন্নয়ন যাত্রায় বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অনেকগুলো উদ্ভাবনী কর্মসূচি পরিচালনা করছে উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ বহুপাক্ষিকতাবাদে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নে বাংলাদেশ সব সময় জাতিসংঘের ডাকে সাড়া দিয়েছে। এই গ্রুপটিকে সমর্থন করার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতি সেই প্রত্যয় থেকে এসেছে। তিনি বলেন, জিসিআরজিকে এগিয়ে নিতে সবার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত।

এই বছরের ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব মোকাবেলায় বৈশ্বিক করণীয় সমন্বয়ে খাদ্য, শক্তি এবং অর্থ সংক্রান্ত একটি গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন।
 
গত ১৩ এপ্রিল জিসিআরজিতে যুক্ত হতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে আহ্বান জানান জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হতে সম্মতি জানান প্রধানমন্ত্রী।