• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহ্বান

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২১  

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দৃঢ় সংকল্প নিয়ে জাতি গঠনের কাজে পূর্ণ আত্মনিয়োগের জন্য জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। দেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন এবং উন্নয়নের জন্য দেশবাসীকে তিনি কঠোর পরিশ্রম ও অপরিহার্য আত্মত্যাগের ডাক দেন। এই দিন ঢাকায় প্রকাশিত দেশের প্রথম পাঁচসালা পরিকল্পনার মুখবন্ধে বঙ্গবন্ধু দেশবাসীর প্রতি এই আহ্বান জানান। পরিকল্পনা কমিশনের প্রণীত দেশের প্রথম পাঁচসালা পরিকল্পনার মুখবন্ধে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘দেশের জনগণ যদি সর্বাত্মক সংকল্প নিয়ে কঠোর পরিশ্রম এবং অপরিহার্য আত্মত্যাগী না হয়, তাহলে কোনও পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে পারে না, সে পরিকল্পনা যতই সুপরিকল্পিত হোক।’

প্রথম পাঁচসালা পরিকল্পনার ভূমিকায় বঙ্গবন্ধু গভীর আস্থা প্রকাশ করেন যে, দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জনগণ যে সাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন, দেশের প্রথম পাঁচসালা পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য জনগণ সেই একই সাহসের পরিচয় দেবেন।

দৈনিক বাংলা, ২৮ নভেম্বর ১৯৭৩

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দেশের এই প্রথম পাঁচসালা পরিকল্পনা প্রণীত হয়েছে স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র দেড় বছরের মধ্যে।’ তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর পর  প্রথম পাঁচসালা পরিকল্পনা প্রণয়নে দারুন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কেননা, স্বাধীনতার পর সরকারের কাছে কোনও পরিকল্পনা সংগঠন ছিল না, ছিলনা অর্থনীতির সব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নির্ভরযোগ্য তথ্যাদি।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এ কারণে এই পাঁচসালা পরিকল্পনায় কিছুটা ফাঁক থেকে যেতে পারে।’ বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেন,দেশের অর্থনীতির গতিধারা প্রবাহিত হবে তা নির্দেশের জন্য এবং কী কী বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, সে সম্পর্কে একটি সুনির্দিষ্ট সামঞ্জস্য কর্মসূচি দেওয়ার উদ্দেশ্যেই সরকার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রথম পাঁচসালা পরিকল্পনা চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়।’

আদমজী মিলে বঙ্গবন্ধুর আকস্মিক পরিদর্শন

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদিন আকস্মিকভাবে আদমজী জুট মিলের কাজ পরিদর্শন করেন। তিনি জেনারেল ম্যানেজারকে অপসারণ ও পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার জন্য সাময়িকভাবে মিল বন্ধ রেখে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধি দলের সমন্বয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন। দেশের বৃহত্তম জুট মিল আদমজী জুট মিলের জেনারেল ম্যানেজারকে অপসারণ ছাড়াও অপর চার জন বিভাগীয় ম্যানেজারকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এই চার জন হলেন— আদমজী জুট মিলের ম্যানেজার, প্রশাসন বিভাগীয় ম্যানেজার, দুই নম্বর মিলের ম্যানেজার এবং তিন নম্বর মিলের ম্যানেজার। আদমজী জুট মিলের কাজ পরিদর্শনকালে শ্রমিকদের বলেন, ‘যেকোনও মূল্যেই হোক উৎপাদন বাড়িয়ে তুলতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘যেকোনভাবে উৎপাদন ব্যাহত করতে দেওয়া হবে না।’

ডেইলি অবজারভার, ২৮ নভেম্বর ১৯৭৩

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি জানি, উৎপাদন বাড়াতে আপনারা আমার সঙ্গে সহযোগিতা করবেন।’ উৎপাদনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায় যারা, তাদের বিরুদ্ধে তিনি তদন্তের নির্দেশ দেন। শ্রমিকদের বিপুল হর্ষধ্বনির মধ্যে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন যে, অপরাধীদের কঠোর সাজা দেওয়া হবে। যারা মিল নষ্ট করছে, বাংলাদেশে তাদের ঠাঁই হবে না। উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আপনাদের অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

তদন্তের জন্য আদমজী জুট মিলের সব কাগজপত্র ও বই খাতা আটক করা হয়। যে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধি দল আদমজী জুট মিলের এ বিষয়ে তদন্ত করবেন, সেই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক সচিব এম এ সাত্তার। এই প্রতিনিধি দল মিলের জন্য পাট কেনার কাগজপত্র ও হিসাব এবং মিলের খুচরা যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশের স্বল্পতা এবং অন্যান্য বিষয়ে তদন্ত করবেন বলে জানানো হয়।