• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

রেশম শিল্প সম্প্রসারণ হচ্ছে ৩০ জেলায়

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২১  

সিল্কের হারানো অতীত ফিরিয়ে আনতে দেশের ৩০ জেলার ৪২ উপজেলায় রেশম শিল্পের সম্প্রসারণ চায় সরকার। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশে রেশম শিল্পের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা (দ্বিতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্প নিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। ৪৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে রেশম উন্নয়ন বোর্ড। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

রেশম শিল্প বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাংলাদেশের প্রায় ছয় লাখ চাষি রেশম শিল্পের সঙ্গে জড়িত, যার মধ্যে এক লাখ রেশম গুটি উৎপাদক।

সরকারি অর্থায়নে হওয়া প্রকল্পটি চলতি বছরের জুলাইয়ে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক শ্যাম কিশোর রায় বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে রেশম চাষ ও শিল্পের সম্প্রসারণ এবং উন্নয়নের পাশাপাশি গুণগতমান রেশম গুটি ও রেশম সুতার উৎপাদন বাড়বে।

রেশম শিল্প সম্প্রসারণ হচ্ছে ৩০ জেলায়

তিনি বলেন, এ সেক্টরে দক্ষ লোকের অভাব আছে। প্রকল্পের ফলে রেশম চাষ ও শিল্পের বিভিন্ন পর্যায়ে কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রেশম সেক্টরে দক্ষ জনবল গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এছাড়া সুযোগ সৃষ্টি হবে বেকার জনগোষ্ঠী ও নারীর কর্মসংস্থানের। ফলে দারিদ্র্য বিমোচন ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির ওপর চলতি বছরের ২৫ মার্চ প্রকল্প মূল্যায়ন সভা (পিইসি) অনুষ্ঠিত হয়। কিছু শর্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে পিইসি সভায় সুপারিশ করা হয় প্রকল্পটি অনুমোদনের। গত ৩০ জুন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পিইসি সভার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকল্প পরিকল্পনা পাঠায় পরিকল্পনা কমিশনে। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পরিকল্পনা মন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া গেছে বলে জানা যায়।

রেশম বোর্ড জানায়, বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রায় ৮০টি ছোট ও মাঝারি রেশম কারখানা রয়েছে। এখনো এ শিল্পের কাঁচামালের সিংহভাগ আমদানি করা হয়।

রেশম শিল্প সম্প্রসারণ হচ্ছে ৩০ জেলায়

বার্ষিক চাহিদা পূরণের জন্য আমদানি করা হয় প্রায় ৫শ মেট্রিক টন কাঁচা রেশম। স্থানীয়ভাবে পূরণ করা যায় চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ। রেশম শিল্পের বিপ্লব ঘটাতে স্থানীয়ভাবে রেশমের চাহিদা পূরণের বিকল্প নেই বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগেও রেশম শিল্পের উন্নয়নে একই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর আলোকে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে জানা যায়।

এরই মধ্যে ‘বাংলাদেশে রেশম শিল্পের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পটির সমাপ্তি মূল্যায়ন সম্পন্ন করেছে আইএমইডি। প্রকল্পটির পরিচালক মৌসুমী জাহান কান্তা বলেন, প্রকল্পের ডিপিপি হয়েছে। এখন অনুমোদনের অপেক্ষায়।

রেশম শিল্প সম্প্রসারণ হচ্ছে ৩০ জেলায়

প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, হতদরিদ্র, ভূমিহীন ও নারীদের রেশম চাষে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে চাই প্রকল্পটির মাধ্যমে। এছাড়া প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রেশম চাষে সক্ষমতা বৃদ্ধি, রেশম গুটি ও কাঁচা রেশমের উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে দেশীয় চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।

দেশে তুঁত চাষ বাড়ানো ও বাণিজ্যিকভিত্তিতে রেশমের উৎপাদন বাড়াতে ফার্মিং পদ্ধতিতে রেশম চাষ সম্প্রসারণ করা প্রকল্পের উদ্দেশ্য বলেও জানান তিনি।

জানা যায, এক সময় রেশম সুতা থেকে শুধু শাড়ি তৈরি হলেও এখন পণ্যের বৈচিত্র্য ও ডিজাইনের বিস্তৃতি ঘটেছে। সব বয়সী ও শ্রেণির মানুষের পরার উপযোগী নানা ধরনের রেশম বস্ত্র তৈরি হচ্ছে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও ও গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানায়। এছাড়া রেশম চাষ পৌঁছে গেছে পার্বত্য চট্টগ্রামেও।

রেশম শিল্প সম্প্রসারণ হচ্ছে ৩০ জেলায়

রাজশাহীতেই উৎপাদিত হয় দেশের সিংহভাগ রেশমপণ্য। রেশম উন্নয়ন বোর্ডের সদর দপ্তরও সেখানে। রাজশাহী শিল্ক দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী একটি ঐতিহ্যের নাম হয়ে উঠেছে। এই বছরের ২৬ এপ্রিল রাজশাহী সিল্ক বিশ্ব মেধাস্বত্ব দিবসে ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন্স) হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছে।

প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) শরিফা খান বলেন, প্রকল্পটি রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ৩০টি জেলার ৪২টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে। চলতি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তি ও বরাদ্দ প্রস্তাবিত প্রকল্পটি চলতি বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে। এর মাধ্যমে রেশমপণ্য বাজারজাতকরণের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশি সিল্কের বাজার পরিধি ও চাহিদা যেমন বাড়বে, তেমনি বিশ্ববাজারে পণ্যটি হয়ে উঠবে ঐতিহ্যের অঙ্গ।