• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

জাপানে প্রথম দিন যা বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২১  

১৯৭৩ সালের এই দিন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপান সফর করছিলেন। বাংলাদেশ পুনর্গঠনে জাপানের সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। বিশিষ্ট শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের উদ্দেশে ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য জাপানের সক্রিয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সাহায্যের আহ্বান জানান।

পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের কাজ সেই সময় পর্যন্ত শেষ না হলেও অর্থনীতিকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা এবং আগামী বছরগুলোর উন্নয়ন কাজে সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশ পাঁচশালা পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজও শুরু করেছেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানতম সমস্যা হলো—স্বল্পতম সময়ের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের সুযোগ-সুবিধার ব্যাপক সম্প্রসারণ, যথেষ্ট পরিমাণ সার ও উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ এবং সর্বোপরি আমাদের জনগণকে উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার সম্পর্কে যদি আমরা সজাগ করতে না পারি, তবে উর্বর ভূমি ও বিপুল সম্পদের সাহায্যে উক্ত লক্ষ্যে উপনীত হতে পারার কোনও কারণ নেই।’ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে জাপানের মূল্যবান সাহায্য কামনা করেন।

 

দৈনিক বাংলা, ২০ অক্টোবর ১৯৭৩ জাপানের সাহায্য আমাদের প্রয়োজন

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাসের সর্বাধিক ব্যবহারের মাধ্যমে পেট্রো কেমিক্যাল উৎপাদন, উপকূলীয় এলাকায় তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান ও আহরণ এবং যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি সুসংহতকরণে জাপানের মূল্যবান সহযোগিতা ও সহায়তার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলো শুধু আর্থিক সহায়তার ক্ষেত্রে জাপানের সাহায্য চায় না, সঙ্গে সঙ্গে আমরা জাপানের উন্নততর কারিগরি ও প্রযুক্তি বিদ্যা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে মূল্যবান অভিজ্ঞতা, কৃষি উৎপাদনের হার বৃদ্ধির কর্মকৌশল, জাপানের অনবদ্য শিক্ষা ব্যবস্থা—এসব কিছু থেকেই আমরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হতে চাই।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কাঠামোতে দ্বিপাক্ষিকতার ভিত্তিতেই জাপানের সাহায্য আমাদের প্রয়োজন।’

বঙ্গবন্ধু-তানাকা বৈঠক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপানের প্রধানমন্ত্রী তানাকার সরকারি বাসভবনে তাঁর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে তিনি জাপানি প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। তানাকা এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে। ১৯৭৪ সালের প্রথম দিকে তাঁর দক্ষিণ এশিয়া সফরকালে তিনি বাংলাদেশে আসবেন। বৈঠকে উভয় নেতা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি ও বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে কৃষি, শিল্প ও যোগাযোগ ব্যবস্থার মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়।

ডেইলি অবজারভার, ২০ অক্টোবর ১৯৭৩ জাপান ২৪ কোটি টাকার পণ্য ঋণ দেবে

বাংলাদেশের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে বাংলাদেশকে ২৪ কোটি টাকা ঋণ দেবে বলে জানিয়েছে জাপান। জাপানের প্রধানমন্ত্রী কাকুই তানাকা ও সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তানাকা এই ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বৈঠকে তানাকা ঘোষণা করেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে লোকবিনিময়ের ব্যাপারে জাতিসংঘের কার্যক্রমে জাপান সরকার ১০ লাখ ডলার দান করবে। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণা করেন, জাপান বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সেটি সবচেয়ে সহজ শর্তে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘কোনও দেশকে এ ধরনের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ঘটনা জাপানের এই প্রথম।’

সিরিয়ার পথে বাংলাদেশি মেডিক্যাল টিম

সিরিয়ায় যুদ্ধাহতদের চিকিৎসা দিতে এই দিন বাংলাদেশি একটি মেডিক্যাল টিম ঢাকা ত্যাগ করে। এদিন সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজে করে বাংলাদেশের ২৮ সদস্যের চিকিৎসক দল সিরিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করে। বাসস জানায়, এই দলে সাত জন ডাক্তার এবং ২১ জন প্যারামেডিক্যাল ও সহকারী রয়েছেন। আরবের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের একাত্মতা ও তাদের প্রতি সমর্থনের প্রতীক হিসেবে চিকিৎসার জন্য এই দলটি পাঠানো হয়।