দেশ-বিদেশে সর্বত্রই বাংলাদেশ পুলিশের প্রশংসা শুনতে পাই

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দেশ-বিদেশে সর্বত্রই আমাদের দেশের পুলিশের প্রশংসা শুনতে পাই। বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতা, নিষ্ঠাবান ও কর্তব্যপরায়ণ হয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করছে। শুধু জঙ্গিবাদ নয়, যে কোনো চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলা করে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে পুলিশ। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী আরও দক্ষ ও শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএসএ) নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। আগামী এক বছরের জন্য বিপিএসএ’র এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) রাতে মিরপুর পুলিশ কনভেনশন হলে নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়।

করোনাকালীন পুলিশের কাজের প্রশংসা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারির সময় পুলিশ ফ্রন্ট ফাইটার হিসেবে কাজ করছে। সন্তান যখন তার মায়ের দাফন না করে পালিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সেই সময় দাফন সম্পন্ন করেছে। ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছে। ব্যবস্থা করেছে চিকিৎসার। বিগত সময়ের পুলিশ আর এখনকার পুলিশ এক নয়। মহামারির সময় শত শত পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারপরও জনগনকে সেবা দিতে পিছিয়ে নেই তারা। দেশের মানুষ এখন পুলিশকে সম্মান করে। আমাদের যেতে হবে বহুদূরে। এজন্য বাংলাদেশ পুলিশকে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে।

বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ নবগঠিত কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আশা করি আগামী এক বছর এই কমিটি তাদের দায়িত্ব অত্যন্ত সফলভাবে পালন করবে। পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই কমিটি কাজ করবে।

তিনি বলেন, আমরা গত দুই বছর ধরে মহামারির মধ্যদিয়ে সময় পার করছি। এসময় বাংলাদেশ পুলিশের ১২৬ সদস্য করোনাকালীন দায়িত্ব পালনকালে জীবন উৎসর্গ করেছেন। ২৬ হাজারে বেশি পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, ২৫ হাজারের বেশি সদস্য সুস্থ হয়ে আবারও দেশ প্রেমে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন।

আইজিপি আরও বলেন, বাংলাদেশ পুলিশকে আধুনিক, দক্ষ ও সময়পযোগী করে গড়ে তুলতে ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নির্দেশনায় আত্মমর্যাদাশীল পুলিশ বাহিনী গড়তে আমরা দুর্বার গতিতে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সামাজিক প্রত্যাশা, রাষ্ট্রের ডিমান্ড পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশা করছি।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম তার দায়িত্বকালীন গুরুত্বপূর্ণ কাজের স্মৃতিচারণ করে বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন প্রধানমন্ত্রীর ভিশন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইতোমধ্যে পুলিশ তার সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমার সময়ে গত বছর মহামারি করোনার কারণে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দুই কোটি টাকা সহায়তা তুলে দিয়েছি। এছাড়া অসহায় জনগণের মাঝেও খাবার বিতরণ করা হয়েছে। করোনাকালে পুলিশের যেসব সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের আমরা সাধ্যমতো সহায়তা করেছি। সর্বশেষে নতুন কমিটি তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতায় পুলিশ বাহিনীকে আরও অনন্য ভূমিকায় আসিন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

এসময় বিপিএসএ’র নবনির্বাচিত সভাপতি এসবি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আজ আমাদের অত্যন্ত আনন্দের একটি দিন, যেখানে আমরা মিলন মেলায় পরিণত হয়েছি। বাংলাদেশ পুলিশ সরকারের সবচেয়ে অনুগত বাহিনী। বাংলাদেশ পুলিশের গৌরবময় ইতিহাসের উত্তরাধিকারী হতে পেরে আমরা গর্ববোধ করি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে এ দেশেও অপরাধের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে, অপরাধীরাও তাদের অপরাধের কৌশল প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করছে। তাদের প্রতিরোধে বাংলাদেশ পুলিশকেও যুগপোযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে। শুধু করোনাকালীন নয়, যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ পুলিশ এদেশের মানুষের পাশে থাকবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. খলিলুর রহমান, বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. আসাদুজ্জামান। এসময় বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপিসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

গত ২৬ জুন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভায় নতুন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। সভায় সংগঠনের নবগঠিত কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এসবি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. মনিরুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. আসাদুজ্জামান।