• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

সাড়ে সাত কোটি বাঙালির শুভেচ্ছা নিয়ে গেলেন বঙ্গবন্ধু

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২৬ জুলাই ২০২১  

এদিন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৮ দিনের বিদেশ সফরের প্রাক্কালে বলেন, ‘বিদেশে আমি বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের শান্তি-শুভেচ্ছা ও ভালোবাসার বাণী নিয়ে যাচ্ছি।’

১৯৭৩ সালের এদিন সকালে ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন। বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইট সকাল সাড়ে আটটায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বেলগ্রেডের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন, বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদসহ আরও অনেকে রওনা হন।

তেজগাঁও বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে শান্তি চায় এবং অন্য সবাই সেটাই চাইবে। যুগোস্লাভিয়া সফর শেষে অটোয়ায় কমনওয়েলথের একটি সম্মেলন শেষে ১৪ আগস্ট দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী।

image1 (42)

বঙ্গবন্ধুর সরকারি সফরের প্রাক্কালে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বিমানবন্দরে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে বলেন, ‘আপনার যাত্রা শুভ হোক’। তেজগাঁও বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকে আন্তরিক বিদায় সম্বর্ধনা জানানো হয় এবং মাল্যভূষিত করা হয়।

বিমানবন্দরের সেনাবাহিনীর একটি গার্ড অফ অনার পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। সমবেত গণ্যমান্যদের সঙ্গে করমর্দন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। তাদের মধ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার মোহাম্মদ উল্লাহ, অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সংসদের কয়েকজন সদস্য, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু যখন বিমানের সিঁড়িতে পা রাখেন তখন তাঁকে বেশ প্রফুল্ল দেখাচ্ছিল। সেদিন বেশ কয়েক ধাপ উঠে বঙ্গবন্ধু জনগণের উদ্দেশে দু’হাত নেড়ে সম্বর্ধনার জবাব দিচ্ছিলেন। জনগণ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানের মাধ্যমে প্রিয় নেতাকে বিদায় জানাচ্ছিল।

বিমানের ভেতরে ঢোকার আগে ইশারায় বঙ্গবন্ধু তার নাতী জয়কে নিয়ে আসতে বললে ছাত্রলীগ সভাপতি শহীদুল ইসলাম জয়কে নিয়ে যান।

image0 (51) পাকিস্তান জেনারেলের স্বীকারোক্তি

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টো বাংলাদেশি মুক্তিবাহিনীকে অবাস্তব বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অথচ পাকিস্তানের একজন মেজর জেনারেল স্বীকার করেছেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারাই ইসলামাবাদে দখলদার বাহিনীকে নাজেহাল করেছে। একথা স্বীকার করেছেন মেজর জেনারেল ফজল মকিম খান। তিনি একটি বই লিখেছেন। বইটির নাম ‘পাকিস্তানের নেতৃত্বের সংকট’।

সেখানে তিনি স্বীকার করেছেন, মুক্তিযোদ্ধারা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিজয় অর্জন করে। একদিকে যখন বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত এলাকায় বিপুল সংখ্যক পাকিস্তানি সেনাকে পর্যদুস্ত করে ফেলে, অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরের গেরিলারা পাকিস্তানি কমান্ডারদের ছত্রভঙ্গ করে কোণঠাসা হতে বাধ্য করে। এতে পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পতন ঘটে।

বঙ্গবন্ধুর কাছে ইন্দিরার চিঠি

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেলগ্রেড যাওয়ার পথে বোম্বে বিমানবন্দরে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর একটি পত্র তাঁকে দেওয়া হয়। ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতরের সচিব সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি অবশ্য এ ব্যাপারে বেশি কিছু প্রকাশ করতে অসম্মতি জানান। বঙ্গবন্ধু সেখানে ৪৫ মিনিট অবস্থান করেন। বিমানবন্দরে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানান।

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, ইন্দিরা গান্ধী চিঠিতে উপমহাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং পিন্ডির আলোচনা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করেন।

image1 (42)

পিন্ডি আলোচনায় অগ্রগতি

উপমহাদেশের অমীমাংসিত সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্দেশ্যে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এদিন দুই ঘণ্টা আন্তরিক ও ফলপ্রসূ আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে এক যুক্ত বিবৃতিও প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে আগামীকালও আলোচনার সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা এ পর্যন্ত প্রায় সাত ঘণ্টা আলোচনা করেছেন। সর্বশেষ আলোচনায় মানবিক সমস্যাগুলোর সমাধানের প্রচেষ্টায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে বলে জানানো হয়। ভুট্টো পিন্ডি প্রত্যাবর্তন করলে চূড়ান্ত পর্যায়ে আলোচনা শুরু হবে বলে জানানো হয়।

অবশ্য এখনও উভয়পক্ষ নিজ নিজ বক্তব্যে অটল রয়েছে। ভারত যুক্ত ঘোষণার পরিমণ্ডল থেকে বাইরে যেতে অসম্মতি জানিয়েছে এবং পাকিস্তান যুদ্ধবন্দিদের বিষয়ে তাদের অবস্থানে অবিচল।