• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

মাদারীপুরে সরকারি সমন্বিত বহুতল দৃষ্টিনন্দন অফিস ভবন নির্মাণ

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১  

বাংলাদেশের মধ্যে সর্ব প্রথম মাদারীপুরে ১০ তলা সরকারি সমন্বিত অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়। এক একর জায়গার উপর নির্মাণ করা ভবনটির ব্যায় হয়েছে ৭০ কোটি টাকা। ভবনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয় জুন মাসে। পরবর্তীতে চলতি মাসের ৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন ভবনটি উদ্বোধন করেন। শকুনী লেক এবং মাদারীপুর-শরীয়তপুর আঞ্চলিক সড়কের পাশে ভবনটি অবস্থিত। ভবনে একত্রে ৪০টি সরকারি অফিসের বরাদ্দ রয়েছে। ভবনের কিছু কাজ এখনও বাকি থাকায় বরাদ্ধকৃত অফিসগুলো নতুন ভবনে উঠতে পারছে না। আগামী মাসে অফিস ভবনে বরাদ্ধকৃত অফিস উঠতে পারবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলা শহরে অনেকগুলো ছোট-বড় সরকারি অফিস রয়েছে যাদের নিজস্ব কোন ভবন নেই। শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভাড়া বাসায় রয়েছে এ সরকারি ভবনগুলো। এর ফলে সাধারণ মানুষ সরকারি অফিসগুলোর সেবা নিতে বিড়ম্বনায় পড়ছে। জেলার এ সকল অফিসগুলোকে কিভাবে এক জায়গায় একটি ভবনের নিচে রাখা যায় তার জন্য মাদারীপুর দুই আসনের সংসদ সদস্য, আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ২০১২ সালে জেলায় একটি সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন নির্মাণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তবনা দেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে বিষয়টি পর্যালোচনা করার জন্য ২০১২ সালের ২৬ আগস্ট গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ভবনটির ধারনা একেবারেই নতুন ছিল বলে অনেক গবেষণা করা হয়। ভবনের নকশা প্রনয়ণ করার জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তর ও স্থাপত্য অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দেয়া হয়। দীর্ঘ সময় গবেশনা ও পর্যবেক্ষণের পর ২০১৬ সালের মার্চে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী ভবনটির অনুমোদন দেন।

দরপত্রের কার্যক্রম সম্পন্ন করে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। নিচতলা থেকে ৪র্থ তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোরে ২০ হাজার বর্গফুট এবং ৫ম তলা থেকে ১০ তলা পর্যন্ত প্রতি ফ্লোরে ১৬ হাজার বর্গফুট জায়গা রয়েছে। ভবনটিতে ৪০টি সরকারি অফিস সংস্থান করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভবনের বেসমেন্টে ৪২ টি গাড়ি এবং নিচতলায় ১৩ টি গাড়িসহ ৫৫টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভবনে চারটি লিফট, পাঁচশত কেভিএ জেনারেটর, বারশত পঞ্চাশ কেভিএ বিদ্যুতের সাবস্টেশন, বিভিন্ন ফ্লোরে এবং বাহিরে সিসিটিভি স্থাপন, পার্কিংয়ে থাকা গাড়ির জন্য পিএ সিস্টেম, অফিস প্রধানদের রুম ও মাল্টিপারপাস হলরুমে এয়ার কন্ডিশন সরবরাহ করা হয়েছে। স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। ফলে ভবনের ভিতরে ব্যবহৃত অপরিশোধিত বর্জ্য বাহিরে নর্দমায় আসবে না। ফায়ার হাইড্রেন্ড, ফায়ার প্রোটেকশন ও ডিটেকশন সিস্টেম, ফায়ার ডোর স্থাপন করা হয়েছে। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং স্থাপন, ৩৫ কিলোওয়াট অনগ্রিড সোলার প্যানেল, সুপরিসর ক্যান্টিন, ডে কেয়ার সেন্টার, ব্যাংক এর শাখা, আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম ও স্টেজ সমৃদ্ধ তিন হাজার দুইশত বর্গফুট মাল্টিপারপাস হলরুম, প্রতিবন্ধী ও শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষের জন্য হুইলচেয়ার এক্সেসিবল টয়লেট, ইন্টারনেট, পিএবিক্স, টেলিফোন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। চলতি মাসের ৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন ভবনটি উদ্বোধন করেন।

মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের দেশের মধ্যে সর্ব প্রথম মাদারীপুরে সরকারি সমন্বিত অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়। সরকারি সকল নির্দেশনা ও বিল্ডিং কোড মেনে আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে ভবনটিতে। এক একর জায়গার উপর ভবনটি প্রতিষ্ঠিত। ভবনটির নির্মাণে খরচ হয়েছে ৭০ কোটি টাকা। চলতি মাসের ৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন ভবনটি উদ্বোধন করেন। ভবনে ১৮টি সরকারি অফিস বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মাদারীপুরকে অনুসরন করে গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এ রকম ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এক সাথে অনেকগুলো সরকারি অফিস থাকায় সরকারের অনেক টাকা সাশ্রয় হয়েছে এবং পাশাপাশি জেলার মানুষের ভোগান্তি অনেক কমে যাবে।

মাদারীপুর দুই আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক নৌমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান জানান, ২০১২ সালে আমি যখন নৌ মন্ত্রী ছিলাম তখন জেলায় একটি সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন নির্মাণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তবনা দেই। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী আমার প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন। ২০১৬ সালের মার্চে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী ভবনটির অনুমোদন দেন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হয়। দশতলা ভবনটি বাংলাদেশের মধ্যে সর্ব প্রথম মাদারীপুরেই নির্মাণ করা হয়। এক সাথে অনেকগুলো সরকারি অফিসের সেবা নিতে পারবে জেলার মানুষ। এতে সাধারণ মানুষের অনেক কষ্ট দূর হবে।