• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

স্বস্তি এনেছে সিঙ্গেল ডিজিট

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২ সেপ্টেম্বর ২০২০  

করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাবে ধসে পড়া শিল্প বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বড় ধরনের স্বস্তি এনেছে ব্যাংক ঋণের এক অঙ্কের (সিঙ্গেল ডিজিট) সুদহার। সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদি নতুন-পুরনো প্রায় সব ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারীর মধ্যে এটা উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। তবে স্বল্পমেয়াদি পুরনো ঋণগুলোর সুদহার এখনো সিঙ্গেল ডিজিটে নামায়নি ব্যাংকগুলো। উদ্যোক্তারা বলছেন, ব্যবসা ও শিল্প বিনিয়োগের স্বার্থে এটাও বাস্তবায়ন হওয়া জরুরি। বিশেষ করে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে নেওয়া ঋণগুলোর সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে আসা উচিত।

জানা গেছে, বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের মন্দা পরিস্থিতির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই করোনাভাইরাসের প্রভাবে থমকে যায় দেশের অর্থনীতির চাকা, যা এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারী দীর্ঘায়িত  হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের অচলাবস্থাও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এটি অবশ্য শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বের পরিস্থিতি একই রকম। তবে এরই মধ্যে বাংলাদেশে ব্যাংক ঋণের সিঙ্গেল ডিজিট সুদহারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়ায় বিপর্যস্ত এই অর্থনীতিতে নতুন করে গতির সঞ্চার হচ্ছে। ১ এপ্রিল থেকেই সরকারের এ সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে কার্যকর করেছে বেশির ভাগ ব্যাংক। বর্তমানে দেশের সব ব্যাংকই ঋণের সুদহার এক অঙ্ক বাস্তবায়ন করেছে। একই সঙ্গে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার-ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়নও করছে ব্যাংকগুলো। এর সুবিধা পেতে শুরু করেছেন প্রায় সকল শ্রেণির উদ্যোক্তা। ফলে একদিকে সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট, অন্যদিকে নামমাত্র (সাড়ে ৪ শতাংশ) সুদে পাওয়া প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থের সুবিধায় ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশের সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য। শিল্প খাতের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। নতুন করে শুরু হয়েছে উৎপাদন। চাহিদাও বাড়ছে ধীরে ধীরে। একই সঙ্গে রপ্তানি আদেশগুলো ফিরে এসেছে। আবার নতুন করে কিছু রপ্তানি আদেশও আসছে বলে জানা গেছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কেটে গেলে খুবই দ্রুত দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হবে বলে আভাস দিয়েছেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের একদল গবেষক।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তা কেপিসি ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সাজেদুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি নতুন-পুরনো সব ঋণের সুদ এক অঙ্কে নামিয়েছে ব্যাংকগুলো। একই সঙ্গে আমরা সরকার-ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধাও পেয়েছি। এতে কিছুটা হলেও স্বস্তি এসেছে। তবে করোনাভাইরাস মহামারী দীর্ঘায়িত হওয়ায় এখনো আতঙ্কের মধ্যে আছি। ঝুঁকি নিয়েই সব ধরনের কলকারখানা খোলা হয়েছে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিয়েই উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হচ্ছে। চাহিদাও ধীরে ধীরে বাড়ছে। ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়াটা প্রায় পুরোটাই নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর।’ এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এটি আগেরই সিদ্ধান্ত। কার্যকর হয়েছে পয়লা এপ্রিল থেকে। এটি আরও আগে করতে পারলে ভালো হতো। আমি অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এটি চেষ্টা করে আসছি। বাংলাদেশের মতো এত বেশি সুদহার আর কোনো দেশে নেই। আমাদের শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামগ্রিক অর্থনীতি এবং জনগণের স্বার্থে এর খুব প্রয়োজন ছিল।’ এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী চলতি বছরের শুরুতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমার পর জুনে এসে কিছুটা বেড়েছে। গত বছর অক্টোবরে ঋণপ্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ০৪ শতাংশ হয়েছে। এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে ঋণপ্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগস্টে ছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এর আগের মাস জুলাই শেষে ছিল ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ। জুনে ঋণপ্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ, মে মাসে যা ছিল ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ। এর আগের মাস গত বছর এপ্রিলে ছিল ১২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, মার্চে ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ। করোনাভাইরাসের সংকটের মধ্যেই বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হওয়ায় বর্তমানে ঋণপ্রবৃদ্ধি বাড়তে শুরু করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-ডিসিসিআইর সাবেক প্রেসিডেন্ট আবুল কাসেম খান বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিল্প উৎপাদন ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এক অঙ্কের সুদ হার এ সময় এক ধরনের ইতিবাচক নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা রাখছে। করোনা পরিস্থিতি ডিসেম্বরের মধ্যে কেটে গেলে আশা করা যায় শিল্প খাতও চাঙ্গা হতে শুরু করবে বলে তিনি মনে করেন।