• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

সালাম দিয়ে ‘সালাম পার্টি’র অপকর্ম

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০২০  

আসসালামুয়ালাইকুম। কেমন আছেন ভাই? আপনি কি আহম্মদের লোক? কোথায় যাচ্ছেন? এই বলে রিকশার সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন এক যুবক।

অনেকটা হতবাক হয়ে উত্তর দেন রিকশায় থাকা ব্যক্তি এনায়েত উল্লাহ- আহম্মদ নামে আমি কাউকে চিনি না, আর আপনি কে? 

এর মধ্যেই রিকশার পেছন থেকে আরও ৩ জন লোক এসে ঘিরে ধরে এনায়েত উল্লাহকে। অস্ত্র দেখিয়ে বলে- চিল্লাচিল্লি করবি না। তোর কাছে যে টাকা আছে দিয়ে দে, নাইলে জানে মাইরা ফালামু।  

মুহুতেই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন এনায়েত উল্লাহ। ছিরতাইকারীরা তার প্যান্টের দুই পকেটে (ডান ও বাম) হাত গলিয়ে টাকার বান্ডেল ছিনিয়ে নেয়। এতে ভুক্তভোগী এনায়েত চিৎকার দিলে স্থানীয়রা ছুটে আসে। টাকা নিয়ে দৌড়ে পালানোর সময় স্থানীয়রা ছিনতাই চক্রের এক সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলীকে (৩০) ধরে ফেলেন। বাকিরা টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।

ছিনতাইয়ের শিকার ভুক্তভোগী এনায়েত উল্লাহ স্বরাষ্ট্র-মন্ত্রণালয়ের পিআইডি বিভাগে দফতরি হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ মাস আগে মেয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান করতে বন্ধু সেলিমের কাছ থেকে চার লাখ টাকা ধার নিয়েছিলাম। গত ১৭ আগস্ট সকালে ধারের ওই টাকা পরিশোধ করতেই বংশালের নিজ বাসা থেকে বের হই। রিকশাযোগে বংশাল থানাধীন নর্থ সাউথ রোডের ময়লার গলিতে পৌঁছালে ৭/৮ জন ছিনতাইকারী অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আমার কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। ’

ঘটনার দিনই ভুক্তভোগী এনায়েত বংশাল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। অনুসন্ধানে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরায় নির্ভরযোগ্য কোনো ভিডিও ফুটেজ পায়নি পুলিশ।  

এদিকে, হাতেনাতে গ্রেফতার হওয়া আসামী জাহাঙ্গীর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দোষ স্বীকার করে। এরপর ১৮ আগস্ট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় ছিনতাইকারী জাহাঙ্গীর। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত ২১ আগস্ট ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর থানার নারকেল বাড়ীয়া গ্রাম থেকে চক্রের আরও দুই সদস্য মো. হাসান (৩৫) ও মো. মিরাজকে (৩৪) গ্রেফতার করা হয়। রিমান্ডে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর ২৯ আগস্ট নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেয় গ্রেফতার আসামী মো. হাসান।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বংশাল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রাশিদুল হাসান বলেন, হাতেনাতে গ্রেফতার হওয়া আসামী জাহাঙ্গীরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চক্রের দুই সদস্য হাসান ও মিরাজকে ঝালোকাঠি থেকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে হাসান ও মিরাজের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২৬/১২ মৌলভীরটেক (রশিদ মিয়ার বাড়ী) থেকে ছিনতাইকৃত টাকার মধ্যে ৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। বাকি টাকা চক্রের মূলহোতা ও পলাতক আসামীদের কাছে রয়েছে বলেও জানিয়েছে গ্রেফতার হওয়া আসামীরা।

ছিনতাই হওয়া বাকি টাকা উদ্ধার ও চক্রের মূলহোতাসহ পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রাশিদুল।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ছিনতাইকারী চক্র ‘সালাম পার্টি’র মূলহোতা বিল্লাল। এই চক্রের মধ্যে নারীসহ ৮/১০ জন সদস্য রয়েছে। ছিনতাই চালাতে তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। চক্রের নারী সদস্যরা অনেক সময় বোরখা পরেও নারী ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে চক্রের সদস্যদের কাছে তথ্য সরবরাহ করে থাকে।  

গ্রেফতার হওয়া আসামীরা জবানবন্দীতে বলেন, ছিনতাইকৃত টাকা থেকে মুলহোতা বিল্লাল তার হাত খরচ বাবদ ২৫ হাজার টাকা হাসানের কাছে পাঠায়। সেই টাকা থেকে হাসান ৬ হাজার, মিরাজ ৩ হাজার, আমির আলী ১০ হাজার টাকা নেয়। চক্রের সদস্য আমির আলী গ্রেফতার জাহাঙ্গীরের স্ত্রীকে ৬ হাজার টাকা দেয়।

বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন ফকির বলেন, ছিনতাইয়ের এই ঘটনায় ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ছিনতাই চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। ৩ জনের মধ্যে দুইজন ইতিমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দিয়েছেন। এই চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, কোনো এলাকায় ছিনতাই করতে তারা টার্গেট ব্যক্তিকে সালাম দিয়ে পথরোধ করে, কুশল বিনিময় করতে করতে অস্ত্র দেখিয়ে সবকিছু ছিনিয়ে নেয়। ছিনতাইকারী এই চক্রটি ‘সালাম পার্টি’ নামে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার বংশাল, রামপুরা, বাড্ডা, শাহবাগ, চিটাগাং রোড, কেরানীগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় ছিনতাই কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। এই চক্রের কয়েকটি দল রয়েছে, প্রতিটি দলের জন্য একজন করে দলনেতা থাকে।